আরেকদিনের কথা , মামাতো ভাই শরীফের সাথে খড়ের গাদায় কুস্তা কুস্তি করতে করতে শরীফের মুখটা খড়ের গাদায় চেপে ধরল। শরিফের যখন প্রায় দম যায় যায় অবস্থা তখন কেউ একজন দেখতে পেয়ে চিৎকার দিয়ে বড় খালাকে ডাকতে শুরু করলো। বড় খালার কথা শোনে সে শরীফ কে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। তা না হলে সেদিন যে কি অঘটন ঘটত আল্লাই জানে। এরকম আরো বহু ঘটনা রয়েছে। সেজন্য বড় খালা বেশি গ্রামে আসতে চাইতেন না। তার এই একগুঁয়ে তেজী মেজাজের জন্য সবাই তাকে একটু ভয় ভয় করেই চলে। আর আমি তো সেইদিন আমার কপাল কাটার পর থেকে তাকে একটুও দেখতে পারিনা। read more তার নাম শুনলে আমার মেজাজটা গরম হয়ে যায়। যতটা পারি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।
রাতের খাবারের সময় আম্মাকে খুঁজতে খুঁজতে রান্নাঘরে হাজির হলাম। বড় মামি রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। আমাকে ডেকে হাতে একটা বাটি ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”যা তো মা,এই বাটিটা ওখানে তোর মামারা যেখানে খেতে বসেছে দিয়ে আয়। মুরাদ আবার মাছ খায় না সেজন্য ওর জন্য একটু ডিম ভুনা করেছি ,দিয়ে আয়।”
শিউলি মুখটা বাঁকা করে বলল ,”তুমি দেখো , মানুষের স্বভাব এত সহজে বদলায় না । কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না।”
আমার আবার বান্ধবী সুমনাকে ছাড়া চলে না, একসাথেই বসেছিলাম আমরা। কিন্তু ম্যাম তাকে ডাকলে সে ম্যামের পাশের সিটে বসেছে। আমার পাশের সীট ফাঁকা পড়ে আছে, কোনো এক আগন্তুকের অপেক্ষায়। আমি বাইরের বাগানটার সৌন্দর্য উপভোগ করছি, আমার ঘোর কাটল তখনই যখন শুনলাম কেউ আমাকে ডাকছে। মাথা ঘুড়িয়ে দেখি, এক সিনিয়র দাদা আমাকে বলছে, সে বসার জায়গা পায়নি। আমার পাশের সীট-তো ফাকাই আছে, আমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে সে সেখানে বসতে চায়।
কিন্তু দেখা আর হল কই ‘সখীর সনে’ স্কুল গিয়ে শুনি, ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম, সকালে সমীরের সাথে দেখা হবে, ভেবে যতটা আনন্দ হচ্ছিল, এবার ঠিক ততটাই নিরাশ হয়ে গেছি।
এদিকে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে দুর থেকে চক্ষের পানি ঝরান দিশার আম্মু-আব্বু।
সে বলল ,আপনাদের কি কখনো খুঁজে পাওয়া যায়? আপনারা কে কোথায় থাকেন বুঝাই যায়না”। বলে আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
বাপ মা মরা ফিরোজা খালা গাইল,”জলে ভাসা পদ্ম আমি ….ও আমার সহেলি …..আমার নাইকো কোথাও কোনো ঠাই….”
ফোন টিপার অপরাধে রোজ একবার হলেও । সীমিত আকারে মায়ের মুখে গালাগালি খাওয়া আমি!
কি সব ‘পাগলের মতো কথা বলছো তুমি আম্মু!” ওর মতো গুন্ডা ‘বখার্টে ছেলেকে তুমি ভালো ছেলে বলছো। ওর কি কোনো লাজ ‘লজ্জা আছে নাকি। এদের কাজ শুধু মারপিট করা। বিনা নটির্সে যে কারো বাসায় প্রবেশ করা। দেখছো না একটু আগেই আমাদের বাসায় এসে পুরো পার্টিটাই নষ্ট করে দিলো। তাই তো আমি ওকে এখান থেকে ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চাইলাম। তখন তো সে এখান থেকে চলে গেলো। কি ব্যাহায়া’নীর্লয্য’ছেলে একটা ওর মা-বাবা হয়তো ওকে ভালোভাবে শিক্ষা দিতে পারে।
পরেরদিন পুকুরে গোসল করার সময় ছোট খালা জানালো আজ বড় খালারা রাজশাহী থেকে আসছে। কথাটা শুনেই মামাতো বোন শিউলি জিজ্ঞেস করল,
শুভ জন্মদিন। তোমাকে তোমার জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। জানিনা আমার গিফটের বক্সটা তুমি খুলে দেখবে কি না। তারপরেরও অনেক আশা নিয়ে আমার নিজের হাতে আঁকা ভালো না হলেও মনের গহিন থেকে তোমার একটা ছবি একে তোমার কাছে গিফট হিসেবে পাঠালাম। ছবিটা একটু দেখো। আর শোনো ‘তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো পারলে একটু সময় করে পড়ে নিয়ো। যানো আমি না সেই ছোট্ট বেলা থেকে মা-বাবা কারো আদর পাইনি। এক কথা বলতে গেলে বলা যায় আমি এতিম। ছোট বেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে বড় হই আমার এক মামির কাছে। কিন্তু আল্লাহ ‘মনে হয় আমার কপাঁলে সেই সুখটাও লেখেন নি।
অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প গৌরব নিজেও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, মাইনে ভালো , তবে নিজের গ্রাম ছেড়ে বহুকাল আগেই ও এই শহরে পাড়ি দিয়েছে পড়াশোনার তাগিদে। সেই ক্লাস টেন থেকে ওদের সম্পর্ক । তবে ‘মিয়া-বিবি’ রাজি হলেও দুই বাড়ির মধ্যে জাতিগত বিবাদ থাকায় বিয়ে অব্দি গড়ায়নি ওদের সম্পর্কটা।
খালার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ খেয়াল করলাম একজোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই চোখের দৃষ্টি এতটাই স্বচ্ছ আর এতটাই তীব্র যে আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম। দৃষ্টির তীব্রতা এতই গাঢ় ছিল যে তা আমার বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটাতে শুরু করল। আমার কানের পাশে লক্ষ-কোটি মৌমাছির গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। এরপর খালার আর কোন কথাই আমার কানে ঠিকমতো ঢুকছিল না। সম্বিৎ ফিরে এলো নানির কথায়, “যাও নানু ভাই হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নাও অনেক দূর থেকে এসেছো’।